পুরান ঢাকার এই চিত্র সংশ্লিষ্টরা জানলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না
অনলাইন ডেস্ক ::
নকল ওষুধের জন্য বিখ্যাত পুরান ঢাকা। সেখানে খোলাবাজারে মেলে ওষুধের কাঁচামাল।
সন্ধান মেলে ভেজাল ওষুধের কারখানারও। অবশ্য এর বিরুদ্ধে প্রতি বছর একাধিকবার অভিযান চলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের। তবুও বেপরোয়াভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে, মিটফোর্ড রোডের ক্যাপিটাল মার্কেটে ওষুধের সব ধরনের কাঁচামাল খোলাবাজারে পাওয়া যায়। যেখান থেকে নকলবাজরা উপকরণ সংগ্রহ করে ভেজাল ওষুধ প্রস্তুত করেন। শুধু নামসর্বস্ব নয়, নামিদামি ব্র্যান্ডের ওষুধ সবচেয়ে বেশি নকল ও ভেজাল হচ্ছে। তবুও নকলবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী নয় কোম্পানিগুলো। কারণ তাদের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের ডাম্পিং করা হয় মিটফোর্ডে। গত বছর ইসলামপুর ও বাবুবাজার চালের আড়তের পেছনে কয়েকটি নকল ওষুধের কারখানা ও গোডাউনের সন্ধানও পায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদন-বিপণনকারী চক্র আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ‘সেকলো’ নামে একটি ওষুধের নকল চালান ধরা পড়ে। ওই ঘটনার পর ওষুধটির বিক্রি কমে যায় অনেকটাই। একই ঘটনা ঘটে অন্য জনপ্রিয় ওষুধগুলোর ক্ষেত্রেও। কোনো ওষুধের নকল হওয়ার বিষয়টি খুব বেশি প্রকাশ্যে চলে এলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি সেটির লেভেল পাল্টে ফেলে।
পুরান ঢাকায় পাইকারি ওষুধের মার্কেটগুলো ঘুরে জানা গেছে, নামিদামি ব্র্যান্ডের ওষুধই নকলবাজদের টার্গেটে থাকে। এর মধ্যে ফ্লুক্লক্স, ফ্লুক্লোক্সিন, রেভিস্টার, মাইজিড, পলিক্সিম, ম্যাক্সপ্রো, জিম্যাক্স, সেকলো, নাপা এক্সট্রা, রেনিটিডিন, প্রভিয়ারের মতো ওষুধগুলো সবচেয়ে বেশি নকল হয়। ক্যাপিটাল মার্কেটে ওষুধের কাঁচামালের মধ্যে হরমোন, অ্যান্টিবায়োটিক ও ভিটামিন সহজেই পাওয়া যায়। মিটফোর্ড ওষুধ মার্কেটের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, কিছু কোম্পানির লোক রয়েছেন যারা নির্দিষ্ট নামের ওষুধ নকল পেলে কিনে নেন। তাদের অনেকেই নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন এখানকার ওষুধ মার্কেটগুলোর। ওয়াকিবহাল সূত্র বলছে, নকল ও ভেজাল ওষুধের সরাসরি মারাত্মক প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্যের ওপর। অসুস্থ হলে ওষুধ খেতেই হবে। সঠিক ওষুধ না খেয়ে নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ খেলে অসুখ ভালো না হয়ে আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক এই প্রতিবেদককে জানান, ২০১১-১৫ পর্যন্ত সংসদীয় স্বাস্থ্য কমিটি ওষুধের কোম্পানি ও মার্কেটের ওপর পরিদর্শন চালায়। ওই পরিদর্শনে তিনিও ছিলেন। পরিদর্শনের সময় বিভিন্ন কোম্পানির স্টোরে দেখা গেছে বেশির ভাগ ওষুধের কাঁচামাল আসে মিটফোর্ড থেকে। আবার ওই মিটফোর্ডেই মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধগুলো সরবরাহ করা হয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে উপকরণ সংগ্রহ করে আটা, ময়দা, সুজি মিশিয়ে বেশি মুনাফার উদ্দেশ্যে ওষুধ ভেজাল করে প্রস্তুত করেন। নকল ও ভেজাল প্রতিরোধের জন্য মিটফোর্ডের ওষুধের দোকানগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। জানা গেছে, গত বছরের ৩০ জুলাই পুরান ঢাকার সরদার মেডিসিন মার্কেটের সামনে শফিকুল ইসলাম (৩৭) নামে এক যুবক নকল ওষুধসহ আটক হন। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ নকল অ্যান্টিবায়োটিক ট্রাইসেফ ক্যাপসুল। অথচ ২০১৬ সাল থেকে ট্রাইসেফ ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রাখে সংশ্লিষ্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটিই গোপনে জানতে পারে যে মিটফোর্ডে এক লোক নকল ওষুধ বিক্রি করছেন। পরে শফিকুলকে নকল ওষুধসহ আটক করা হয়। নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর কোতোয়ালি থানায়। মামলাও হয়। মাত্র ১৫ দিনের মাথায় জামিনে মুক্ত হন শফিকুল। গত বছর অক্টোবরে আবারও ট্রাইসেফ ওষুধ সরবরাহ শুরু করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতিতে কর্মরত মাহমুদ আলম বলেন, ‘আমরা শুধু ওষুধের দোকানগুলো দেখাশোনা করি। আর ওষুধের কাঁচামাল বিক্রি হয় ক্যাপিটাল মার্কেটে। সেগুলো আমাদের আওতায় পড়ে না। ’ এ বিষয়ে জানতে গতকাল ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) রুহুল আমিনের মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। অন্য পরিচালক গোলাম কিবরিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ওই বিষয়ে কোনো কিছু বলতে পারব না। ’
পাঠকের মতামত: